রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের ধারণা-সাধারণ অর্থে সরকার কর্তৃক গৃহীত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়কে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় বলে। এরূপ ব্যবসায় রাষ্ট্রকর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। আবার ব্যক্তিমালিকানাধীন যে কোনো ব্যবসায়কে রাষ্ট্রের প্রয়োজনে জাতীয় করণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ে রূপান্তরিত করতে পারে। সাধারণত দেশে অধিক শিল্পায়ন, অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মুদ্রা ও ব্যাংকিং ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ, প্রাকৃতিক সম্পদসহ সকল সম্পদের সুষম বন্টন ও ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এবং বিশেষ কিছু জনকল্যাণমূলক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে।
রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের ধারণা, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা লাভের পর নতুন সরকার জনকল্যাণমুখী সুষম ও ও ন্যায় ভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অনেকগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প কারখানা বাণিজ্যিক আর্থিক ও বীমা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করে। সাথে সাথে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় বেশকিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। পরবর্তীতে অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি মালিকানা ছেড়ে দিলেও এখনো অনেকগুলো রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাংলাদেশের বেশকিছু রাষ্ট্রীয় ব্যবসা এর নাম ধরন ও সেগুলো নির্মাণাধীন মন্ত্রণালয়ের রূপ দেয়া হয়েছে।
তাছাড়া দেশ রক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য অস্ত্র নির্মাণ শিল্পের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার উদ্দেশ্যেও রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা ও পরিচালিত হয়ে থাকে। বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই রাষ্ট্রীয় পরিচালনায় বেশ কিছু ব্যবসায় পরিচালিত হয়ে থাকে।
রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের বৈশিষ্ট্যঃ
অন্যান্য ব্যবসায়ের চেয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের বেশ কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে সেগুলো বিশ্লেষণ করা হলো –
- রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় সাধারণত রাষ্ট্র প্রধানের অধ্যাদেশ বা জাতীয় সংসদে বিল পাসের মাধ্যমে গঠিত হয়। তাছাড়া সরকারি অধ্যাদেশের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করনের মাধ্যমেও এরূপ ব্যবসায় গঠন করা যায়।
- রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের মালিকানা সম্পূর্ণভাবে রাষ্ট্রের উপর ন্যস্ত থাকে ও সকল মূলধন সরকারই সরবরাহ করে থাকে। তবে সরকার কোনো কোনো অবস্থায় জনগণের নিকট আংশিক শেয়ার বিক্রি করতে পারে। এ ক্ষেত্রে মূলধন যোগানদাতা সরকার ও জনগণ।
- বিশেষ আইন দ্বারা গঠিত হয় বলে এ জাতীয় ব্যবসায় কৃত্রিম ও স্বতন্ত্র ব্যক্তি সত্তার অধিকারী। স্বতন্ত্র ব্যক্তিসত্তার অধিকারী হওয়ার কারণে রাষ্ট্রীয় ব্যবসায় চিরন্তন অস্তিত্বের অধিকারী।
- অন্যান্য ব্যবসায়ের মতো মুনাফা অর্জন বা বৃদ্ধি রাষ্ট্রীয় ব্যবসায়ের মূল উদ্দেশ্য নয়। জনসেবা বা জনকল্যাণই এ জাতীয় ব্যবসায়ের প্রধান উদ্দেশ্য।
- এ জাতীয় ব্যবসায়ে লাভ হলে তা সরকারি তহবিলে জমা হয় এবং জনকল্যাণে ব্যয় হয়। আবার লোকসান হলে তা সরকারকেই বহন করতে হয়।
- এ জাতীয় ব্যবসায়ের সাফল্য ও ব্যর্থতার জন্য সরকারকে জাতীয় সংসদের নিকট জবাবদিহি করতে হয়।
বাংলাদেশের ব্যবসায় উদ্যোগ উন্নয়নে বাধা
বাংলাদেশের ব্যবসায় উদ্যোগ উন্নয়ন সম্পর্কিত পরিবেশ এর সকল ক্ষেত্রে অনুকূল নয়। অনেক বাধার কারণে এখনো উদ্যোগ উন্নয়ন উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। ব্যবসায় উদ্যোগ উন্নয়নের কিছু বাধা নিচে তুলে ধরা হলো-
সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব, উন্নয়নের জন্য নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ও পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন সম্ভব এমন পরিকল্পনা খুব প্রয়োজন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, বাংলাদেশে এরকম ব্যাপক সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাব রয়েছে।
চাকরির প্রতি অধিক আগ্রহ, প্রাচীনকাল থেকেই এদেশের মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল থেকেছে। ফলে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর তাদের আগ্রহ অনেকাংশে কম। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের কে আরো চাকরির প্রতি অধিক ভাবে আগ্রহী করে তুলেছে। ব্যবসায় উদ্যোগ উন্নয়নের এটি একটি প্রধান ও অন্যতম বাধা।
কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার অপর্যাপ্ততা, আমাদের দেশে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা মুখস্থনির্ভর ও তাত্ত্বিক শিক্ষাক্রম এর উপর প্রতিষ্ঠিত। দীর্ঘদিন যাবৎ এ ব্যবস্থা চলে এসেছে পৃথকভাবে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রচলিত থাকলেও মেধাবী শিক্ষার্থীদের আগ্রহ একদমই কম। অন্যদিকে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত না থাকায়, অনেক শিক্ষার্থী এ সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারছেনা। ফলে ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেনি।
প্রচার প্রচারণা অভাব, যেকোনো পদক্ষেপ বাস্তবায়নের প্রচার বিজ্ঞাপন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ব্যবসায় উদ্যোগ উন্নয়নের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ সম্পর্কে যথেষ্ট কার্যকর। প্রচার না থাকায় গ্রাম ও শহরের অনেক মেধাবী তরুণ তরুণী বেকার যুব শক্তি ও এ সম্পর্কে জানতে পারছে না। ফলে ব্যবসায় উদ্যোগ উন্নয়নের কর্মসূচি সার্থকতা লাভ করতে পারছে না।
প্রয়োজনীয় অর্থসংস্থানের অভাব, অনেকেই আছেন যারা উদ্যোগ গ্রহণে আগ্রহী কিন্তু প্রয়োজনীয় মূলধন ও অর্থের অভাবে এগিয়ে আসতে পারছেনা। অর্থসংস্থানের অপর্যাপ্ততা ব্যবসায় উদ্যোগ গ্রহণের অন্যতম বাধা।প্রশিক্ষণের অভাব, উদ্যোক্তা হওয়ার অনেকটা জন্মগত হলেও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অনেক উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশে উদ্যোগ উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।
রাজনৈতিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা যেকোন দেশের অর্থনীতি ও প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় এবং ব্যবসায় কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়। যার ফলে সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাগণ কিছু করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।